আহিল্যাবাই হলকার (৩১ মে ১৭২৫ – ১৩ আগস্ট ১৭৯৫) ছিলেন মারাঠা সাম্রাজ্যের একজন অসাধারণ রাণী, যিনি আধুনিক ভারতের প্রেক্ষাপটে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যবসায়ী দক্ষতা ও দানশীলতার জন্য পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন অগ্রগামী শাসক।
আহিল্যাবাই হলকার এর জীবনী (Ahilyabai Holkar Biography)
আহিল্যাবাই ৩১ মে ১৭২৫ তারিখে একটি মারাঠি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা, মানকোজি শিন্দে, প্রতিষ্ঠিত ধাঙ্গর পরিবারের প্যাটিল হিসেবে কাজ করতেন। সে সময় নারীদের শিক্ষার বিশেষ সুযোগ ছিল না, তবে আহিল্যাবাইয়ের বাবা কন্যা হওয়ার সতেও তিনি তার মেয়েকে শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
তাঁর প্রাথমিক জীবনের তথ্য খুব কমই পাওয়া যায়, তবে জানা যায়, মাত্র ছয় বছর বয়সে, খান্দের রাও হলকারের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। খান্দের রাও ছিলেন মালহার রাও হলকারের একমাত্র পুত্র, যিনি পেশওয়া বাজিরাওয়ের অধীনে উত্তর ভারতের একজন প্রভাবশালী কমান্ডার ছিলেন। ১৮শতকের ভারত ছিল একটি টালমাটাল সময়, যেখানে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মারাঠা সেনাবাহিনী এক অভূতপূর্ব শক্তিতে পরিণত হয়।
১৭৫৪ সালে আহিল্যাবাইয়ের স্বামী খান্ডের রাও কুম্ভেরির কাছে নিহত হন। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি বিধবা হন। আহিল্যাবাইয়ের একটি পুত্র, মালেয় রাও, এবং একটি কন্যা, মুক্তিবাই। তাঁর পুত্রের মধ্যে মহান যোদ্ধার গুণ ছিল, কিন্তু মানসিক অসুস্থতার কারনে ১৭৬৭ সালে তার মৃত্য হয়। এই সংকটময় সময়ে আহিল্যাবাই সরকারী কার্যক্রমে নিজেকে আরও গভীরভাবে জড়িত করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৭৬৫ সালে আহমেদ শাহ দুঘরানি পাঞ্জাব আক্রমণ করেন। এ সময় আহিল্যাবাই গোহাদ ফোর্টের দখল নেন। স্বামীর ও পুত্রের মৃত্যুর পর, আহিল্যাবাই একজন প্রশিক্ষিত শাসক হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি পেশওয়া মাধব রাওয়ের কাছে মারাঠা রাজবংশের দখল ফিরে পাওয়ার জন্য আবেদন করেন।
এ সময়ের ভারতীয় নারীরা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য খুব একটা এগিয়ে আসতেন না।, কিন্তু আহিল্যাবাই এর ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি দুই পেশওয়ার সচিবের চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং মারাঠা নেতাদের সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হন, বিশেষ করে পেশওয়া মারাঠা রাওয়ের সন্তানহীন স্ত্রী রামাবাইয়ের। তিনি এমন একটি গুজব ছড়ান যে তিনি এবং রামাবাই যৌথভাবে নারীদের একটি সেনাবাহিনী গঠন করছেন। অবশেষে, তিনি সফল হন এবং পেশওয়ার প্রধানরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী পুরুষদের বিরত হতে আদেশ দেন।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা: ১৭শতক ও ১৮শতক ভারতের ইতিহাস ছিল বিশৃঙ্খলার, যেখানে আওরঙ্গজেব ভারত জুড়ে তার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চেয়েছিলেন।আওরঙ্গজেব সারা ভারত জুড়ে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিলেন যার ফলে সেই সময় বহু হিন্দু মন্দির ও তীর্থস্থান ক্ষতিগ্রস্থ হয় পরে আহিল্যাবাইয়ের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তীর্থস্থান ও মন্দির পুনর্গঠন করেন,
মহেশ্বরের পরিবর্তন: আহিল্যাবাইয়ের নেতৃত্বে মহেশ্বর পুনরুজ্জীবিত হয়। ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানান এবং তাদেরকে ১০ বছরের কর ছাড় প্রদান করেন। তিনি স্থানীয় অঞ্চলের তাঁতিদেরও আমন্ত্রণ জানান, ফলে মহেশ্বরী কাপড়ের উত্পাদন শুরু হয়, যা পরবর্তী কালে খুব বিখ্যাত হয়ে ওঠে।
স্থাপত্য উত্তরাধিকার: আহিল্যাবাই পুরো দেশে তার নির্মাণ কাজের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি বহু মন্দির, ঘাট, ধর্মশালা ও যাত্রী নিবাস নির্মাণ করেন। তাঁর নির্মাণের কিছু উদাহরণ হল
- সোমনাথ
- কাশী
- গয়া
- অযোধ্যা
- মথুরা
- হারিদ্বার
- কানচি
- অভান্তী
- দ্বারকা
- বদরিনাথ
- রামেশ্বরাম
- জগন্নাথ পুরী
আহিল্যাবাই হলকার রোড (Ahilyabai Holkar Road)
শিবভক্ত আহিল্যাবাই সাদু ও তীর্থযাত্রীদের সুবিধার জন্য রাস্তার ধারে ধারে গাছের সারি এবং ধর্মশালা নির্মাণ করেন। স্বাধীনতার পর, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য হাইওয়ে ১৫ কে আহিল্যাবাই হলকার রোড নামে নামকরণ করা হয়।
আহিল্যাবাই হলকারের মৃত্যুর কারন (Ahilyabai Holkar Death Reason)
আহিল্যাবাই হলকার ছিলেন একজন অগ্রগামী মহিলা, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হলকার রাজবংশের প্রধান ছিলেন। তাঁর শাসনকাল মারাঠা সাম্রাজ্যের সোনালী যুগ হিসেবে স্মরণীয়। ১৩ আগস্ট ১৭৯৫ সালে তিনি প্রয়াত হন, ৭০ বছর বয়সে।